সবুজ টিশার্ট, মাথায় হেলমেট। সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র লাগানো একটি সাইকেলে চেপে যাত্রা শুরু। ছয় দিনে পেরিয়ে এলেন এক হাজার একশ কিলোমিটারের পথ। নাম সাজ্জাদ হোসেন সাগর, বয়স মাত্র ২৪। তার যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশের এক প্রান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে, আর শেষ হয়েছে আরেক প্রান্তে, কক্সবাজারের টেকনাফ জিরো পয়েন্টে।
কোনো পেশাদার অ্যাথলেট নন, নন কোনো বিখ্যাত পরিবেশবাদীও। তিনি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী—ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগং-এ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। তবে ভাবনার গভীরতায় এবং সাহসে তিনি অনেক ‘অসাধারণ’ মানুষকেও পেছনে ফেলেছেন।
‘Thinking Our Ecosystem’—একটি ভাবনা, একটি বার্তা
সাজ্জাদের এই ছয় দিনের সাইকেল যাত্রার পেছনে ছিল একটি গভীর বার্তা: “Thinking Our Ecosystem”। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং প্রকৃতির ওপর মানুষের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করাই ছিল তার লক্ষ্য।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মানুষের অসতর্ক কর্মকাণ্ড, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার, বন উজাড়—এসবই পৃথিবীর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। আমি চাই, আমার মতো যুবকরাও এগিয়ে আসুক এই পরিবর্তনের কথা ভাবতে’
এক শহর থেকে আরেক শহরে—দিনের পর দিন, রাতের পর রাত
৭ই এপ্রিল দুপুর ২টায় যাত্রা শুরু করেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে। প্যাডেল ঘুরতে থাকে, ঘুরতে থাকে তার আশাও।
প্রথম রাত কাটে বোদা, দ্বিতীয় রাত সিরাজগঞ্জের ভূইয়াজ্ঞাতি, এরপর ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী, চতুর্থ রাত চট্টগ্রামের মিরসরাই নিজামপুর কলেজ, পঞ্চম রাত কক্সবাজারের পেকুয়া বাজার, এবং ষষ্ঠ দিন সন্ধ্যায় টেকনাফ জিরো পয়েন্টে এসে যাত্রার সমাপ্তি।
শেষ গন্তব্যে পৌঁছে যখন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান, তার চোখে তখন ক্লান্তি নয়, বরং স্বপ্ন সফল করার আনন্দ।
এক ভিন্নধর্মী পথচলা—পেছনে পরিবারের প্রেরণা
চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার অভয় পাড়ার ছেলে সাজ্জাদ, পরিবারের মধ্যে সবার ছোট। বাবা ছিলেন গাড়িচালক, মা একজন গৃহিণী। দুই ভাই, চার বোনের এই পরিবারের ছোট সন্তানটি বরাবরই স্বপ্ন দেখেন একটু ভিন্নভাবে কিছু করার।
পরিবারের সহযোগিতা প্রসঙ্গে সাজ্জাদ বলেন, আমার পরিবার সবসময় আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। আমার মা-বাবার কঠিন পরিশ্রম আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
একা নন, সঙ্গে ছিল একঝাঁক ভালোবাসার মানুষ
এই যাত্রা শুধুমাত্র সাইকেলের উপর নির্ভর করেই সম্পন্ন হয়নি। সারা পথজুড়ে নানা শহরে তাকে সাহায্য করেছেন তার বন্ধু, সহযাত্রী, সাইক্লিং কমিউনিটির সদস্যরা।
দ্বি চক্রযান, লিও জেলা ৩১৫ বি-৪, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগং পারিজাত এলিট, এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেন তিনি।
কয়েকজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে সাজ্জাদ বলেন, ইসতিয়াক ভাই, ইঞ্জিনিয়ার লিখন, লিও মামুন, সাইদুল ইসলামসহ অনেকেই পাশে ছিলেন। আমি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
পেলেন প্রশাসনের প্রশংসাও
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। যদি আগেই জানতাম, তাকে স্বাগত জানাতে নিজেই যেতাম।